Skip to content

বইয়ের যত্ন: পোকা দমন

সম্প্রতি আমরা আমাদের বই এবং অন্যান্য উপাদানে একটা পোকা দমন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাই। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এই নোটটি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম, যাতে আপনাদের সবারই উপকার হয়:

  • বইয়ে পোকা ধরার জন্য অনেকেই বইয়ের পাতার নিম্নমানকে দায়ী করেন। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, অনেক নিম্নমানের পাতার বইয়ে যেখানে পোকা ধরেনি, সেখানে উচ্চমানের পাতাযুক্ত বইয়ে পোকার উপদ্রব হয়েছে। আমরা একজন দাতা থেকে আগেকার আমলের পুথির বই সংগ্রহ করেছি, যার পাতাগুলো নিউজপ্রিন্টের। এই পুস্তকখানি এখনও বহাল তবিয়তে আছে, কিন্তু ঐ একই তাকে রাখা একখানা সুন্দর মলাটের রঙিন ছবিযুক্ত মেডিক্যাল ডিকশনারির কোনো একটা পাতাও পূর্ণাঙ্গ উদ্ধার করা যায়নি।
  • আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখেছি, বইয়ের পাতার গুণাগুণের চেয়েও পোকার জন্য আকর্ষণীয় হয়ে থাকে বইয়ের ছাপার কালি, রং ইত্যাদির রাসায়নিক মান।
  • অনেক প্রকাশক মোটা বইয়ে দাম বাড়িয়ে থাকেন বইয়ের জ্যাকেট লাগিয়ে। এবং অনেক পাঠকই জ্যাকেটসহ বই কিনতে পছন্দ করেন, কারণ তারা মনে করেন, বুক-জ্যাকেট বইকে যথেষ্ট নিরাপদ রাখবে। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, বুক জ্যাকেট ধুলাবালি থেকে নিরাপদ রাখলেও বইয়ে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে দেয় না, ফলে জ্যাকেটের অন্ধকার গহীনে পোকাদের শান্তির আবাস গড়ে উঠতে সহায়ক হয়।
  • বইয়ের পোকা দমনে সবচেয়ে বিষধর প্রক্রিয়া হলো Fumigant ব্যবহার। কারণ এর ব্যবহার মানুষের জন্যও ক্ষতিকর। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণে বইয়ের পোকা প্রতিরোধে, নির্মূলে দারুণ কার্যকরী কয়েকটি উপাদান হলো: তেজপাতা, নিম পাতা এবং অতি অবশ্যই ন্যাপথলিন। অনেকেই এক্ষেত্রে কর্পুর, তামাক পাতা ইত্যাদি দেয়াকেও উপাদেয় বলেছেন। তবে আমরা নিয়মিতভাবে ন্যাপথলিনের বড়িকে গুড়া করে বইয়ের পাতার ভিতর, আক্রান্ত বইয়ের ভাঁজে, বইয়ের তাকে দিয়ে থাকি। এতে পরিক্ষীতভাবেই আমরা পোকা প্রতিরোধ এবং পোকা দমনে আশানুরূপ ফল পেয়েছি।
  • আমাদের বইয়ের তাকগুলো তুলনামূলকভাবে স্যাঁতস্যাঁতে হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর স্যাঁতস্যাঁতে স্থান বইয়ের পোকা উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ফাঙ্গাস পড়ে বইয়ের পাতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বইকে আর্দ্রতামুক্ত রাখতে রোদে বই শুকানোর কোনো বিকল্প নেই। বইতে এবং বইয়ের তাকে আর্দ্রতা মাত্রাতিরিক্ত হতে না দিতে বইয়ের তাকে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে রাসায়নিক এসব উপাদান সবার হাতের কাছে থাকে না বলে আমরা অন্য একটা ব্যবস্থা করেছি। নিয়মিত ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খান এরকম একজনের ফেলে দেয়া ওষুধের কৌটার ভিতর থেকে আমরা নিয়মিতভাবে "সিলিকা জেল" ভর্তি প্যাকেট সংগ্রহ করি। এই সিলিকা জেলগুলো দানা আকারে ছোট ছোট প্যাকেটে কৌটার ভিতর ভরা থাকে। অনেকসময় স্যুটকেস, কিংবা বিভিন্ন সরঞ্জামাদিকে আর্দ্রতামুক্ত রাখতে এগুলো ভিতরে পুরে দেয়া হয়। এই সিলিকা জেলভর্তি প্যাকেটগুলো আমরা তাকের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে তাক এবং বইকে আর্দ্রতামুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছি। গত প্রায় ৪ বছরে একবারও বইকে রোদে শোকানো সম্ভব হয়নি আমাদের, কিন্তু তাক এবং বই তবু সম্পূর্ণ আর্দ্রতামুক্ত আছে আলহ্বামদুলিল্লাহ।
  • যেসকল বই ইতোমধ্যেই পোকা আক্রান্ত হয়ে গেছে, সেসকল বইগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে এবং আলাদা তাকে সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে পোকার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়। সরিয়ে ফেলার পরেও পোকা আক্রান্ত বইয়ের সর্বত্র ন্যাপথলিনের গুড়া ছড়িয়ে দিতে হবে। লাইব্রেরী সাইন্সের পরামর্শ হলো বইয়ে বইকেঁচোর (Sitodrepa panic) আক্রমণ হলে তার্পিনযুক্ত তুলো বইয়ের তাকের পিছনে রাখতে হবে এবং আক্রান্ত মলাটে বেনজিন লাগাতে হবে।

বই আমাদের বন্ধু। আর বইয়ের শত্রু হলো পোকা। পোকা দমনে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো নিয়মিত বই পড়া। একবার বইতে পোকা ধরিয়েছেন, তো নিস্তার নেই। তাই্ বন্ধুকে বন্ধুর মতো যত্ন করে পড়লেই কেবল তা যত্ন সহকারে আগলে থাকবে।

আমাদের পরামর্শ আপনাদের কাজে লাগলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। আরো বিস্তারিত জানতে জ্ঞানসুধা গ্রন্থাগারেই সংরক্ষিত একটি বই পড়া যেতে পারে: বই- সংরক্ষণ ও বিপণন, গোলাম মঈনউদ্দিন, বাংলা একাডেমী, ঢাকা (GG-30400131)।